হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৩- সুন্নি মনীষী ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি:
কেবল কোনো বেদাআতির পক্ষেই ইয়াজিদকে ভালবাসা ও তাকে সম্মানিত করা সম্ভব। ইয়াজিদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এমনই যে তার ভক্তরাও ঈমানহীন হতে বাধ্য।
দ্বিতীয় ওমর নামে খ্যাত উমাইয়া শাসক:
তার সামনে একদিন এক ব্যক্তি ইয়াজিদকে আমিরুল মুমিনিন (মুমিনদের নেতা) বলে উল্লেখ করায় ওমর ওই লোকটির ওপর চাবুকের বিশটি আঘাত হানার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ( ইমাম হাজার আসকালানির তাহজিব আত্বতাহজিব, খণ্ড-৬, পৃ-৩১৩)
ইমাম সুয়ুতিও অভিশাপ দিয়েছেন ইয়াজিদকে:
তিনি তারিখুল খোলাফা বইয়ে লিখেছেন: আপনাকে (ইমাম হুসাইন-আ.) শহীদ করা হয়েছে এবং আপনার মস্তক প্লেটে করে নেয়া হয়েছে ইবনে জিয়াদের কাছে। আল্লাহর লানত বা অভিশাপ বর্ষিত হোক যে আপনাকে হত্যা করেছে এবং অভিশাপ বর্ষিত হোক ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের ওপর। (পৃ-১৬৫)
ইমাম ওয়াকিদি:
তিনি আবদুল্লাহ বিন খাজালাতুল ঘুসাইল (সাহাবী) থেকে জানিয়েছেন, ওই সাহাবি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করলে আল্লাহর আজাব হিসেবে আকাশ থেকে আমাদের ওপর পাথর বর্ষিত হবে, খোদার কসম, (এই বিশ্বাসে) নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা বিদ্রোহ শুরু করি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে।’ ইয়াজিদপন্থীরা তথা ইয়াজিদের অনুসারী ও সাঙ্গপাঙ্গরা নিজ মা, বোন ও কন্যাদের বিয়ে করা শুরু করেছিল (জাহেলি যুগের মত), তারা প্রকাশ্যে মদ পান করত এবং নামাজকে উপেক্ষা করত।
ইমাম জাহাবি:
ইয়াজিদ যখন মদিনাবাসীর সঙ্গে এইসব আচরণ (অপরাধযজ্ঞ) করল এবং এর আগে মদপানসহ নানা পাপে ডুবেছিল তখন মক্কার অধিবাসীরাও ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ও চার দিক থেকে জেগে ওঠে। এরপর আল্লাহ ইয়াজিদের জীবনে বরকত দেননি। এরপর ইয়াজিদ মক্কা আক্রমণ করে এবং আবদুল্লাহ ইবনে যোবাইরকে শহীদ করে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। (সুয়ুতির তারিখুল খোলাফা। পৃ-১৬৭)
তিনি আরো বলেছেন, ইয়াজিদ ছিল ঘৃণ্য নাসিবি তথা মহানবীর (সা.) পরিবারের পবিত্র সদস্যগণ তথা আহলে বাইত-বিদ্বেষী। সে মদ পান করত ও পাপাচারে লিপ্ত ছিল। ইমাম হুসাইন (আ.)-কে শহীদ করার মাধ্যমে সে তার রাজত্ব শুরু করে এবং মক্কা ও মদীনায় মহাবিপর্যয় ঘটায়। তাই লোকেরা তাকে ঘৃণা করত ও তার জীবনে কোনো বরকত ছিল না। ইমাম হুসাইন (আ.)’র শাহাদতের ঘটনার পর মদীনার অনেকেই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।
(আসসিয়ার আল আলাম আন নাবুলা, খণ্ড-৪, পৃ-৩৭-৩৮)
ইমাম জাহাবি আরো লিখেছেন:
জিয়াদ হারিসি বলেছে, ইয়াজিদ আমাকে মদ পান করতে দেয়। সেরকম মদ আমি আর কখনও অতীতে পান করিনি। এই মদের উপাদান সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ইয়াজিদ জানায়: এই মদ বানাতে ব্যবহৃত হয়েছে মিষ্টি ডালিম, ইস্পাহানের মধু, হাওয়াজের/ বা আহওয়াজের চিনি, তায়েফের আঙ্গুর এবং বুরাদার পানি।
আহমদ বিন মাসামা জানিয়েছেন:
একদিন ইয়াজিদ মদ পান করে নাচতে শুরু করে। হঠাৎ সে পড়ে যায় এবং তার নাক থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। (আসসিয়ার আল আলাম আন নাবুলা, খণ্ড-৪, পৃ-৩৭)
ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল :
ইমাম হাইথামি ও আল বারাজানি লিখেছেন ইমাম আহমদকে তার ছেলে আবদুল্লাহ ইয়াজিদের ওপর অভিশাপ দেয়ার যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান: পবিত্র কুরআনের সুরা মুহাম্মাদের ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতের আলোকে ইয়াজিদকে অভিশাপ দেয়া বৈধ। এই আয়াতে বলা হয়েছে:
‘ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’
ইয়াজিদের চেয়ে বড় অনর্থ বা নৈরাজ্য পৃথিবীতে আর কে সৃষ্টি করেছিল? (ইমাম আলুসির তাফসির গ্রন্থ রুহুল মায়ানি। খণ্ড-৯, সুরা মুহাম্মাদ-২২-২৩) ...চলবে...
লেখা: রাসেল আমেদ রিজভী